কিভাবে বিড়ালের বয়স বুঝতে পারবেন? বিড়ালটি যদি জন্ম থেকে আপনার সাথেই থাকে তবে এর সঠিক বয়স বোঝা অনেক সহজ। কিন্তু আপনি যদি দত্তক নিয়ে থাকেন কিংবা স্ট্রে বিড়াল'কে নিয়ে আসেন তবে সঠিক বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তবে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ভেট বয়সের একটা রেঞ্জ জানাতে পারবে। এছাড়াও বেশ কিছু লক্ষণ কিংবা শারীরিক পরিবর্তন দেখে আপনিও একটা ধারণা করতে পারবেন। বিড়ালের সঠিক বয়স সম্পর্কে জানা অতীব জরুরী। কারণ একেক বয়সের বিড়ালের খাবার চাহিদা একেক রকম হয়ে থাকে। বিড়ালের বয়সের বিভিন্ন স্টেজঃ একটি বিড়ালের জীবনে সর্বমোট চারটি ধাপ থাকে। তার ০০-৬ মাস পর্যন্ত সে থাকে কীটেন। এরপর আছে তার কৈশোরের জীবন এটি থাকে ৭ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত। এর পরবর্তী ৩-১০ বছর পর্যন্ত থাকে যৌবন কাল। এরপর আসে তার বৃদ্ধ জীবন। ইনডোর বিড়ালের থেকে স্ট্রে বিড়ালেরে জীবনসীমা কম হয়ে থাকে। যেহেতু বাহিরে থাকা বিড়াল অনেক বেশি কষ্ট করে; জীবিকা নির্ধারণ থেকে শুরু করে বেঁচে থাকার জন্য, তাই তাদের বয়স নির্ধারণ করা আরও কঠিন হয়ে পরে। অপরদিকে গৃহেপালিত বিড়াল আরামে থাকে, খাওয়া দাওয়া নিয়ে তার কোন দুশ্চিন্তা না থাকায় সে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকে। এবং তাদের বয়স নির্ধারণ করা তুলনামূলক সহজ। বিড়ালের বয়স বোঝার কিছু টিপসঃ আমার বিড়ালের বয়স কত? এই প্রশ্ন আনুমানিক প্রায় সকল ক্যাট প্যারেন্টের মাথায় একবারের জন্য হলেও আসে। ভেটের সাহায্য ছাড়াও বিশেষ কিছু বাহ্যিক পরিবর্তনের দিকে লক্ষ করলে আপনি মোটামুটি একটা ধারণা করতে পারবেন আপনার প্রিয় বিড়ালের বয়স নিয়ে। ১.শারীরিক পরিবর্তনঃ বিড়ালের শারীরিক গঠন দেখে তার বয়স নির্ধারণ করা কীটেন দের জন্য অনেক সহজ। তাদের নরম পা, ছোট্ট শরীর , তুলতুলে লোম দেখলে সহজেই বোঝা যায় বিড়ালটি একেবেরাই ছানা। আর তাদের পরিণত শরীর, মজবুত হাড় দেখলেই অনুমান করা সম্ভব বিড়াল'টি পূর্ণবয়স্ক। ২.বিড়ালের লোমঃ বিড়ালের লোম কিংবা ত্বক দেখে বয়স আন্দাজ করা সম্ভব। অল্প বয়সী বিড়ালের লোম সাধারণত অনেক উজ্জ্বল ও সুন্দর হয়ে থাকে, কেননা এই বয়সের বিড়াল তাদের লোমের ব্যাপারে অনেক সচেতন হয়ে থাকে। এবং তারা ক্রমাগত নিজেদের গ্রুমিং এর মধ্যে থেকে নিজেদের পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখে। অপরদিকে বিড়ালের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তারা নিজেদের যত্ন নেয়া কমিয়ে দেয়। দেখা যায় তাদের লোমে ময়লা থাকে।অনেক সময় ম্যাটেড ফার ও হয়ে যায়। নিজেদের তেমন পরিষ্কার করে না। এমনকি মাঝে মাঝে দেখা যায় তাদের লোম ঝড়ে যাওয়া শুরু করে কিংবা সাদা/গ্রে/ফ্যাকাসে বর্ন ধারণ করে। তবে ব্যাতিক্রম কিছু আছে, অনেক সময় বিভিন্ন মেডিসিন বা ট্রিটমেন্টের প্রভাবে লোম ঝরা বা রঙের পরিবর্তন হয়ে থাকে। ৩.লেজঃ বিড়ালের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের লেজ ও বৃদ্ধি পায়। একটি বিড়াল শারীরিক ভাবে দুই বছর অবধি বাড়ে। সেক্ষেত্রে লেজ ছোট হয়ে থাকলে বিড়ালটি কিটেন আর পূর্ন লেজ থাকলে পূর্ণবয়স্ক বিড়াল। আবার অনেক সময় দেখা যায় কিছু ব্রিডের বিড়ালের লেজ ছোট হয়ে থাকে। আবার দুর্ঘটনার কারণে কাটাও পড়তে পারে। ৪.দাঁতঃ একটি বিড়ালের সঠিক বয়স নির্ধারণ করা সবচাইতে কার্যকরি উপায় হচ্ছে তার দাঁত দেখা। কিটেন দাঁত ঝড়ে গিয়ে বিড়ালটি বড় হলে তখন তার শক্ত মজবুত দাঁত হয়। তবে এই দাঁত পরতেও অন্তত ৬ মাস সময় লাগে। এরপর বিড়ালের কিটেন দাঁত পরে গিয়ে শক্ত মজবুত দাঁত হয়। এছারাও বিড়ালের দাঁত সাধারণত ছোট বেলায় অনেক সাদা থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের দাঁত ময়লা হতে থাকে। ভেটের পরামর্শ অনুযায়ী বিড়ালের দাঁত প্রতিবছর ক্লিন করানো উচিৎ কেননা এথেকে নানান ধরনের রোগবালাই হয়ে থাকে। আপনি চাইলে বিড়ালদের পেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে তাদের দাঁত প্রতি সপ্তাহে একবার পরিষ্কার করতে পারেন, সেক্ষেত্রে আপনার বিড়াল থাকবে সুস্থ। ৫.চোখঃ আপনার আদরের প্রিয় বিড়ালের চোখের দিক তাকিয়ে তার বয়স নিয়ে ধারণা করতে পারবেন তা কি জানেন আপনি? ছোট্ট বিড়ালদের চোখ সাধারণত অনেক উজ্জ্বল ও পরিষ্কার হয়ে থাকে, অপরদিকে বয়স্ক বিড়ালদের চোখে ছানি পরে কিংবা ঘোলাটে বর্ন ধারণ করে। Nuclear sclerosis নামে তাদের একটি রোগ হয়ে থাকে যা সঠিক পরিচর্যা ও মেডিসিনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ ভাবে সুস্থ করা সম্ভব। ৬.হরমোনাল পরিবর্তনঃ ৬-৭ বয়সের ফিমেল বিড়াল হীটে আসা শুরু করে আর ছেলে বিড়ালের ক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত সময় নেয়। ৭.এক্টিভিটিঃ বিড়াল ছোট অবস্থায় অনেক খেলাধুলা করে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের এক্টিভিটি অনেকাংশে কমে যায়। আপনার আদুরে বিড়াল যদি সারাদিন খেলে বেড়ায় তবে সে নিঃসন্দেহে কিটেন । অপরদিকে দিকে আপনার বিড়াল যদি অলস হয়ে থাকে এবং প্রায় সারাদিন-রাত ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয় তবে আপনার বিড়াল বয়স্ক। বিড়ালের ছোট অবস্থায় যেমন অনেক আদর যত্ন এর প্রয়োজন পরে ঠিক তেমনি বয়স্ক হয়ে গেলে তাদের আরও বেশি যত্নের দরকার। তাই আপনার ছানাটি যেই বয়সের'ই হয়ে থাকুক না কেন তাকে আদর দিন ভালোবাসুন।